আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Wednesday, July 4, 2018

টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাস

১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হয় । নির্বাচন উপলক্ষে হক-ভাসানী-সোহরাওয়াদী যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন।
এই সাধারণ নির্বাচনে যুফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরাজিত
হয়। যুক্তফ্রন্টের কাছে টাঙ্গাইলবাসী টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা ঘোষণা দাবি
জানায়। যুফ্রন্ট তা নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে । যুক্তফ্রন্ট 0
নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম
শুরু করে । এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সক্রিয় সমর্থন ছিল। এইভাবে
বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বছর পর
অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
২. নামকরণ : ১৭৭৮ সালে রেনেল তার প্রকাশিত মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ
অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। । ১৮৬৬ সালের আগে টাঙ্গাইল নামে ।
কোন স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ
করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ সালে মহকুমা সদর দফতর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইল
স্থানান্তরের সময় থেকে । টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আন্দুর
রহিমের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে টান'
শব্দ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে টান শব্দের
প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান
আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। অন্য মতে,
১৮৬৯ সালে সরকারের আদেশ অনুযায়ী পারদী জুলিয়া মৌজায় অন্তর্গত
আতিয়া নামক গ্রামে টান-আইল থানার সদর স্থাপন করা হয়। গত শতাব্দীর
মধ্যবর্তীকালীন সময়ে টান-আইল মৌজা টাঙ্গাইল নামের রূপান্তরিত হয়।
আরও একটি মত রয়েছে- মুফাখারুল ইসলামের তথ্যানুযায়ী কামারী
পরগনায় মোকলা সম্প্রদায় নামে একটি গোষ্ঠী বাস করত। এই মোকলা
সম্প্রদায়ের সর্দার বা মোল্লাদেরকে বলা হতো টাঙ্গাই। পর্যায়ক্রমে এদের
নামানুসারেই জেলার নাম টাঙ্গাইল হয়েছে।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৩৪১৪.৩৫ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ৩৬,০৫,০৮৩ জন। পুরুষ-১১,৫৭,৩৭০ ও
মহিলা-১৮,৪৭,৭১৩ । বৃদ্ধির হার : ০.৯০% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.)
১০৫৬ জন।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ১২টি। টাঙ্গাইল, মধুপুর, গোপালপুর, ভূয়াপুর
ঘাটাইল, কালিহাতীদেলদুয়ার, নাগরপুর, মির্জাপুর, সখিপুর, বাসাইল ও
ধনবাড়ী। ।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ১৩টি। টাঙ্গাইল সদর, মধুপুর, মির্জাপুর,
গোপালগঞ্জ, ভূয়াপুর, নাগরপুর, সখিপুর, কালিহাতি, ঘাটাইল, বাসাইল,
দেলদুয়ার, ধনবাড়ী ও যমুনা সেতু পূর্ব থানা।
৭. সংসদীয় আসন : ০৮টি। (১) মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা (২) গোপালপুর
ও ভূয়াপুর উপজেলা। (৩) ঘাটাইল উপজেলা। (৪) কালিহাতী উপজেলা।
(৫) টাঙ্গাইল সদর উপজেলা । (৬) নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা। (৭)
মির্জাপুর উপজেলা । (৮) সখিপুর ও বাসাইল উপজেলা।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ : বঙ্গবীর কাদির সিদ্দিকীরাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ
সিদ্দিকীমাওলানা আন্দুল হামিদ খান ভাষানী, প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ, আন্দুল
লতিফ খা, পিসি সরকার, মীর আবুল খায়ের, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, রফিক
আজাদ, ড. মাহাবুব সাদিক, নাট্যকার মামুনুর রশিদ, বিচারপতি আবু সায়ীদ
চৌধুরী, রজনীকান্ত গুহ, আন্দুল করিম খান ও আন্দুল হালিম গজনবী ।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-৯৭ কি. মি. ও রেলপথে-৯৭ কি. মি.।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : ঢাকা-মহাখালী-টাঙ্গাইল বাস স্টেশন। ঢাকা।
কমলাপুর-টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশন। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৯২১ ও
পোস্ট কোড-১৯০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক আখবারে এসলামিয়ানবযুগ, আহমদী, নববিধান,
নবমিহির, হিতকরী, ইসলাম রবি, শিক্ষা প্রচার, প্রভাজনতাটাঙ্গাইল
সমাচার, হক কথাবাতায়ন, সাপ্তাহিক অভিযান, প্রবাহ, পূর্বাকাশ ইত্যাদি।
১২. পৌরসভা-১০টি ও ইউনিয়ন-১১০টি।
১৩. উপজেলা ভূমি অফিস-১২টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা-২১৯০টি ও গ্রামের সংখ্যা-২৫১৬টি।
১৫. মোট জমি-৮৯২৫৪৮ একর ও আদর্শ গ্রাম- ১২ টি ।
১৬. শিক্ষার হার-৪৬৮%।
১৭. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, আলু, মরিচ, গম, বাদাম ও ভুটা ।
১৮. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-১,৪৭৭টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
৪০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৩৪৫টি, কলেজ-৫২টি, মাদ্রাসা-১৭৪টি ও
অন্যান্য স্কুল-৯৯টি ।
১৯. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-৬,১৪৪টি।
২০. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১১টি ও
ক্লিনিক-২০টি।
২১. নদনদীর নাম : যমুনা, ধলেশ্বরীবংশী, লৌহজং, খিরু, যুগনী, ফটিকজানি,
এলংজানি, লাঙুলিয়া ও ঝিনাই ।
২২. দর্শনীয় স্থান : রসুলপুর মধুপুর জাতীয় উদ্যান, ভাসানীর মাজার, দোখলা
রেস্ট হাউজ, আতিয়া মসজিদ, আদম কম্মিরী (র:)-এর মাজার, আটিয়া
জমিদার বাড়ি, ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি, হেমনগর জমিদার বাড়ি, বঙ্গবন্ধু
সেতু, যমুনা রিসোর্ট, এলেঙ্গা রিসোর্ট, ভারতেশ্বরী হোমস, মহেড়া জমিদার
বাড়ি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, নাগরপুর চৌধুরী
বাড়ী, উপেন্দ্র সরোবর, যাদব বাবুর বাড়ির সিংহদ্বার ও পাকুটিয়া
জমিদারদের অট্টালিকা ।
২৩জেলার ঐতিহ্য : টাঙ্গাইল একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ। প্রাচীন ইতিহাস
ঐতিহ্য, লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান অনেক
উচুতে। টাঙ্গাইলের লোক-ঐতিহ্য নিয়েও প্রবাদ বচন রচিত হয়েছে। যেমন
চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।

No comments:

Post a Comment