আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Wednesday, July 4, 2018

রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস

১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : বর্তমান রাজবাড়ী জেলা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার
অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা ক্ষমতা লাভের পর রাজশাহীর অন্ত
ভূক্ত ছিল। পরবর্তীতে এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। ১৮১১ সালে।
ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৫৯ সালে।
পাংশা ও বালিয়াকান্দিকে নবগঠিত কুমারখালী মহকুমার অধীনে নেয়া হয়।
১৮৭১ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা গঠিত হলে পাংশা ও রাজবাড়ী এ নতুন
মহকুমার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং রাজবাড়ীতে মহকুমা সদর দফতর স্থাপিত
হয় । ১৯৮৩ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি
থানাকে মান উন্নীত থানায় রূপান্তরিত করলে রাজবাড়ীকে মান উন্নীত থানা
ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাই থেকে সরকার অধ্যাদেশ জারি
করে সকল মান উন্নীত থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার ফলে রাজবাড়ী।
উপজেলা হয়। গোয়ালন্দ মহকুমার প্রশাসনিক দফতর রাজবাড়ীতে থাকায়
অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সকল মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা
হয়। সে থেকে রাজবাড়ী জেলার সৃষ্টি হয়।

২. নামকরণ : মতান্তরে রাজা সূৰ্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ
হয়। রাজা সূৰ্য কুমারের পিতামহ প্ৰরুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্যার
রাজকর্মচারী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে
পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষ্মীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার পুত্র
দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সূর্য
কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন।
রাজবাড়ী রেল স্টেশন-এর নামকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে । বিভিন্ন তথ্য
হতে জানা যায়, রাজবাড়ী রেল স্টেশনের নামকরণ রাজা সুর্য কুমারের
নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি
তোলেন। বর্তমানে যে স্থানটিতে । রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত। উক্ত
জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারগণের। তাদের প্রতিবাদের পরেও
স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায় । এ সকল বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা
হয়, রাজবাড়ী নামটি বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। এলাকার মাওয়ারা
প্রধান, জমিদার, প্ৰতিপত্তিশালী ব্যক্তিগণ রাজা বলে অভিহিত হতেন। তবে
রাজা সূৰ্য কুমার ও তার পূর্বপুরুষদের লক্ষ্মীকোলের বাড়িটি লোকমুখে
রাজার বাড়ি বলে সমধিক পরিচিত ছিল। এভাবেই আজকের রাজবাড়ী।

৩. আয়তন (প্রায়) : ১১১৮.৮ বর্গ কিলোমিটার।

৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ১০,৪৯,৭৭৮ জন। পুরুষ- ৫,১৯,৯৯৯ ও
মহিলা-৫,২৯,৭৭৯ । বৃদ্ধির হার : ০.৯৭% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ৯৬১
জন।

৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম। ০৪টি। বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও
গোয়ালন্দঘাট ।

৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ০৪টি । রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, পাংশা ও
বালিয়াকান্দি ।

৭. সংসদীয় আসন : ০২টি। (১) রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা। (২)
পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা ।

৮. বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ : রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, ওহাব আলী বিশ্বাস, রাম
কানাই শীল, তমিজ উদ্দিন খান, হাজেরা নজরুল, ওবায়দুল ইসলাম, ড.
কাজী মোতাহার হোসেন, এয়াকুব আলী চৌধুরী ও মনসুর উল করিম।

৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে১৩৬ কি. মি. ও রেলপথে-৫৪৬ কি. মি.।

১০ . যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস। ঢাকা-রাজবাড়ী বাস স্টেশন রাজবাড়ী,
দৌলতদিয়া ঘাট বাস স্টেশন, গোয়ালন্দ, পাংশা বাস স্টেশন, পাংশা । রেল:
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন, গোয়ালন্দ রেলওয়ে স্টেশন-কালুখালী রেলওয়ে
জংশন, রতনদিয়া পাংশা । লঞ্চ : দৌলতদিয়া ঘাট, গোয়ালন্দ,
ধাওয়াপাড়াঘাট-সূর্যনগর ইত্যাদি। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৬৪১ ও
পোষ্ট কোড-৭৭০০।

১১ . পত্রপত্রিকা : দৈনিক মাতৃকণ্ঠ, জনতার আদালত, সাপ্তাহিক সাহসী সময়,
রাজবাড়ী সংবাদ, রাজবাড়ী কণ্ঠ ও অনুসন্ধান।

১২. পৌরসভা-০৩টি ও ইউনিয়ন-৪২টি।

১৩. উপজেলা ভূমি অফিস-০২টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-৪৩টি।

১৪. মৌজার সংখ্যা- ৮৫৮ টি ও গ্রামের সংখ্যা-১০৩৬ টি ।

১৫. মোট জমি-১,১২,৭৭৬ একর ও আদর্শ গ্রাম-১০টি।

১৬. শিক্ষার হার-৪৮.৪১%।

১৭. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, ইস্, , তামাক, বেগুন, সরিষা ও ভুটা।

১৮শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৩১৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১৪০টি,
কলেজ-২৫টি ও মাদ্রাসা-১২২টি ।

১৯. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-১,২৩৫টি, মন্দির-১০৫টি ও গীর্জা-০৪টি।

২০. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৩টি, উপ
স্বাস্থ্য কেন্দ্র-২৮টি, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র-২২টি ও ক্লিনিক-২৪৪টি।

২১. নদনদীর নাম : পদ্মাগড়াই, চন্দনাচিত্রা ও কুমার।

২২.দর্শনীয় স্থান। ; কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্স,
এাক্রোবেটিক সেন্টার, রাজবাড়ী সুইমিং পুল, কুটি পাটুরিয়া জমিদার বাড়ি,
গোদার বাজার পদ্মা নদীর তীর ও রাজবাড়ী উদ্যান বেস।

২৩. জেলার ঐতিহ্য : রাজবাড়ী মূলত রেল শহর । উনবিংশ শতাব্দী থেকে
রাজবাড়ীর যে অর্থনৈতিক বুনিয়াদি গড়ে উঠেছে তা রেলকে কেন্দ্র করে।
প্রথমে রেল গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও ঘাটের ভাসন এবং ঘাট
রাজবাড়ী শহরের অদূরে অব্যাহত হওয়ায় রেলের সকল স্থাপনা বর্তমান
রাজবাড়ী শহর এলাকায় গড়ে উঠে যা এ জেলার ঐতিহ্য বহন করে।

No comments:

Post a Comment