আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Wednesday, July 4, 2018

কুমিল্লা জেলার ইতিহাস

১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট । বর্তমান কুমিল্লা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন একটি জেলা।
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা
রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মতের মধ্যে
মোটামুটি গ্রহণযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় চৈনিক পরিভ্রাজক ওয়াং চোয়াও কর্তৃক
সমতট রাজ্য পরিভ্রমনের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়ামলঙ্কিয়া
(Kiamolonkia) নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলালুক বা
কুমিল্লার নামকরণ । হয়েছে বলে পন্ডিতেরা অভিমত দিয়েছেন। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত
প্রাচীন নিদর্শন থেকে যতদুর জানা যায়, খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত
সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল । ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের
মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা
হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। তথ্য প্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে,
দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র
রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার
পরে ১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসে। রাজস্ব আদায়ের
সুবিধার্থে কোম্পানী ১৭৬৯ খ্রি: প্রদেশে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে।
তখন কুমিল্লা ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৭৭৬ খি: কুমিল্লাকে কালেক্টরেটের
অধীন করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা।
কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু করে। ১৭৯৩ সালে ৩য় রেগুলেশন অনুযায়ী ত্রিপুরা
জেলার জন্য একজন দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয় এবং সে বছরই তাকে
ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেওয়া হয়। ১৮৩৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের
পদগুলিকে পৃথক করা হয়। ১৮৫৯ সালে আবার এই দুটি পদকে একত্রিত করা
হয় । ১৯৮৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার
নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর।
পদটির নামকরণ হয় জেলা প্রশাসক। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দুটি মহকুমা
চাদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনগঠন করা হয় ।
২. নামকরণ : কথিত আছেকমলাস্কনগর থেকে কুমিল্লার উৎপত্তি। ১৭৮৫ সালে।
মুদ্রিত ভগবতচন্দ্র বিশারত রচিত ‘ত্রিপুরা সংবাদ" নামক বই থেকে জানা যায়,
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমভাগে হোসেন শাহ যখন গৌড়ের অধিপতি ছিলেন সে
সময় কুমিল্লা নামক এক মুসলমান নায়ক এ স্থানে। বসতি স্থাপন করেন।
পরবর্তীকালে তার নামানুসারে কুমিল্লা নামে জেলাটি পরিচিতি লাভ করে।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৩০৮৫.১৭ বৰ্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ৫৩৮৭,২৮৮ জন। পুরুষ- ২৫,৭৫,০১৮ ও মহিলা
২৮,১২,২৭০। বৃদ্ধির হার : ১.৫৮% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১৭১২ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ১৬টি। আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম,
লাকসাম, বরুড়ালাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনা, তিতাস, দাউদকান্দি,
হোমনামেঘনামুরাদনগর, দেবিদ্ধার, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ১৬টি। আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম,
বরুড়ালাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনাতিতাস, দাউদকান্দি, হোমনা
মেঘনা, মুরাদনগর, দেবিদ্ধার, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া
৭. সংসদীয় আসন : ১১টি । (১) দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা। (২) হোমনা ও
তিতাস উপজেলা। (৩) মুরাদনগর উপজেলা । (৪) দেবীদ্বার উপজেলা। (৫)
ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং উপজেলা। (৬) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা ও কুমিল্লা।
সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়ন। (৭) চান্দিনা উপজেলা ও বরুড়া
উপজেলার চিতড়া ইউনিয়ন। (৮) চিতড়া ইউনিয়ন ব্যতীত বরুড়া উপজেলা
ও নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ ব্যতীত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা : বাগমারা,
বেলঘর, ভুলইন (উত্তর), ভুলইন (দক্ষিণ), পেরুল (উত্তর), পেরুল (দক্ষিণ) ও
গলিয়ারা। (৯) লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা । (১০) নাংগলকোট উপজেলা
ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : বাগমারা, বেলঘর,
ভুলইন (উত্তর), ভুলইন (দক্ষিণ), পেরুল (উত্তর), পেরুল (দক্ষিণ) ও
গলিয়ারা। (১১) চৌদ্দগ্রাম উপজেলা।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তি : মহারাজ বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী,
হরদয়াল নাগ, মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, রায়।
বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়, সৈয়দ আবদুল জব্বার, নওয়াব সৈয়দ হোচ্ছাম হায়দার
চৌধুরী, অখিলচন্দ্র দত্তখান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরী, আন্দুর রসুল, খান।
বাহাদুর আন্দুল করিম, নওয়াব মোশাররফ হোসেন, কামিনীকুমার দত্তবসন্ত।
কুমার মজুমদার, শচীন দেব বর্মন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত
হেমপ্ৰভা মজুমদার, নওয়াব স্যার কে, জি এম ফারুকীআশরাফ উদ্দিন আহমদ।
চৌধুরী, অতীন্দ্রমোহন রায়, শহীদুল হক, খান বাহাদুর মফিজউদ্দিন আহমদ,
আবদুল মালেক, হাবিবুর রহমান চৌধুরীড. আখতার হামিদ খান, মেজর
আবদুল গণি ও ড. মুজিবর রহমান খান।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-৯৭ কি. মি. ও রেলপথে-১৭০ কি. মি.।

১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : ঢাকা-কুমিল্লা-ঢাকা বাস স্টেশন, আন্তজেলা বাস।
স্টেশন, কুমিল্লা- কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন। রেল : কুমিল্লা রেলওয়ে
স্টেশন ইত্যাদি । এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৮১ ও পোস্ট কোড-৩৫০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক রূপসী বাংলাআমাদের কুমিল্লাকুমিল্লার কাগজ,
শিরোনাম, কুমিল্লা মুক্তকণ্ঠ, শ্রমিক, সাপ্তাহিক কুমিল্লা বার্তা, সবুজ পত্র, কুমিল্লা
দর্পণ, চৌদ্দগ্রাম, আমোদ, অপরাধ সংবাদ, লাঙ্গলকোট, বর্ণ পাট, বাংলার
আলোড়ন, টেলিফোন, বাংলাবার্তাআলোর দিশারীসময়ের দর্পণ, লাকসাম
বার্তাচলন ও মাসিক মহাজীবন।
১২. উপজেলা ভূমি অফিস১৬টি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস-১৭২টি।
১৩. সিটি কর্পোরেশন-০১টি, পৌরসভা০৮টি ও ইউনিয়ন-১৮৪টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা-২,৬০৩ টি ও গ্রামের সংখ্যা-৩,৬৮৭টি।
১৫. মোট জমি-৭,৬০,১৭৫ একর। শিক্ষার হার-৬২%।
১৬শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-১,৭৯২টি, কিন্ডার গার্টেন-৩৩৭টি,
কমিউনিটি প্রা. বিদ্যালয়-২২৬টি, কমিউনিটি ২০২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-
৫১৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৯০টি, কলেজ-৪৮টি, ক্যাডেট কলেজ-০১টি,
এবতেদায়ী মাদ্রাসা-২৪২টি ও মাদ্রাসা-৩৫৯টি।
১৭. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-১০৪৯০টি, মন্দির-৪১৫টি ও গীর্জা-৭৯টি।
১৮. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-৫টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১১টি, ক্লিনিক
৪৫টি এবং ইউ: স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র-১২৩টি।
১৯. নদনদীর নাম : মেঘনা, গোমতীতিতাস, ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ী।
২০. উল্লেখ যোগ্য ফসল : ধান, গম, পাট, সরিষাফল, শাকসবজি ইত্যাদি।
২১. দর্শনীয় স্থান : বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শালবন বিহার, আনন্দ।
বিহার, ময়নামতি প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ও যাদুঘর, ময়নামতি যুদ্ধ সমাধি ক্ষেত্র
বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, কুমিল্লা পৌর উদ্যান, শাহ সুজা মসজিদ,
ধর্মসাগর দীঘি, বলেশ্বর দীঘি, রূপবানমুড়াচন্ডিমড়া, লালমাই বৌদ্ধ বিহার,
লালমাই পাহাড় ও ময়নামতি পাহাড়।
২২. জেলার ঐতিহ্য : কুমিল্লার রসমলাই সারাদেশে এক নামে পরিচিত। দুধ, ছানা।
ও চিনি সমন্বয়ে তৈরি এ মিষ্টান্ন। এছাড়া কুমিল্লার বিখ্যাত খদ্দর শিল্প ১৯২১
সাল থেকে এ অঞ্চলে প্রচলিত।

No comments:

Post a Comment