আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Sunday, July 1, 2018

মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে:


বাংলাদেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধন বেশ যন্ত্রনাময় এক প্রক্রিয়া। কোথাও যেন কোন জবাবদিহিতা নেই। তারপরও রাস্তায় হয়রানি এড়াতে ও আইনি বৈধতা নিয়ে চলাচল করতে আপনাকে এই বাধ্যতামূলক যন্ত্রনা সহ্য করতেই হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া।

প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সংগ্রহ করুন
আপনি যদি নিজেই নিজের মোটরসাইকেলের নিবন্ধন করতে চান তবে মোটরসাইকেল কেনার সাথে সাথেই আপনাকে এর নিবন্ধনের যাবতীয প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সমূহ সংগ্রহ করে নিতে হবে। আর বর্তমানে নিবন্ধন পদ্ধতিটি এমন যে আপনি যদি ডিলারকে দিয়ে নিবন্ধন করাতে চান তবুও অনেক বিষয়ে আপনাকে সময় দিতেই হবে, হয়তো কিছু ক্ষেত্রে তাতে ঝামেলা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই বাইক কেনার সাথে সাথেই আমদানী সংক্রান্ত কাগজসহ বাকী কাগজগুলো ভালো করে বুঝে নিন। যেমন:
১. আমদানী সংক্রান্ত সকল কাগজ
২. কাষ্টমস ক্লিয়ারেন্স
৩. গেটপাশ
৪. ভ্যাট-১১ (আমদানীকারক আর ডিলার উভয়েরই)
৫. ট্রেজারী চালান (আমদানীকারক আর ডিলার উভয়েরই; সোনালী ব্যাংক থেকে)
৬. ক্যাশ-মেমো
৭. ক্রেতার জাতিয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি

পুরো কাগজের সেটই ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে। নতুন নিবন্ধন ছাড়াও পুরাতন কোন বাইক কেনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তা না হলে আপনি নিবন্ধন করতে পারবেননা। মনে রাখবেন, ডিলাররা প্রায়ই অসুম্পূর্ন কাগজ দেয় যাতে ক্রেতা নিবন্ধন করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন ও পুনরায় তার শরনাপন্ন হন এবং বাড়তি কিছু টাকার বিনিমযে তারই মাধ্যমে নিবন্ধন করিয়ে নেন। তবে বিআরটিএ তে দালাল ধরার চেয়ে ডিলারের মাধ্যমে কাজ করানো তুলনামূলক ভাল। বিআরটিএ তে মোটরসাইকেল নিবন্ধন করানো আসলেই বেশ এক ঝামেলা আর বিরক্তিকর কাজ। তবু নিজের বাইক নিজেই নিবন্ধন করাতে চাইলে অবশ্যই সম্ভব এবং নিশ্চয়ই আপনি তা থেকে কিছু শিখবেন আর ঝামেলাটুকু হয়তো উপভোগও করবেন।

যাইহোক, নিবন্ধনের জন্য কাগজের পুরো সেট সংগ্রহ করার পর বিআরটিএ অফিস অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে তিন পাতার যানবাহন নিবন্ধন ফরম টি সংগ্রহ করুন। আবেদনকারী আর বাহনের তথ্য সহকারে ফরমটি পূরন করুন। এই ফরমটিই আপনার আবেদনপত্র, যার সাথে বাকী সকল কাগজ-পত্র সংযুক্ত করতে হবে। আপনার সকল কাগজ-পত্র সহকারে আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে নিরীক্ষন করিয়ে নিন। কোন কাগজ বাদ পড়লে বা বাড়তি কাগজ দরকার হলে বিআরটিএ কর্মকর্তাই আপনাকে জানিয়ে দেবে। কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে তারা আপনাকে একটা এ্যাসেসমেন্ট ফরম পূরন করে দেবে যেটা আসলে সংশ্লিষ্ট ফি এর খাত উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট টাকা জমা দেবার মানি ডিপোজিট স্লিপ; যার মাধ্যমে আপনি ব্যংকে বা সংশ্লিষ্ট বুথে নিবন্ধনের টাকা জমা দেবেন। আর এই ফরমটিতে আপনি আফিসিয়াল সিল ও স্বাক্ষর নিতে ভুল করবেননা।


ব্যাংকে টাকা জমা দিন
সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ নির্দেশিত ব্যাংক বা বুথে তাদের লিখে দেয়া এ্যাসেসমেন্ট স্লিপের মাধ্যমে টাকা জমা দিন। এখানে তারা আপনার ব্যবহৃত সক্রিয় ফোন নম্বরও বিআরটিএ’র ডাটাবেজে রাখবে। আর টাকা জমা নিয়ে তারা আপনাকে একটা কম্পিউটার প্রিন্ট করা বিশেষ মানি রিসিপ্ট দেবে। মানি রিসিপ্টটি আপনি আপনার আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করবেন।

বিআরটিএর তথ্য মতে ৫০ এবং ৮০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ১৫ হাজার ৬১৩ টাকা। ১০০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ২১ হাজার ৩৬৩ টাকা। এবং ১৫০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ২৩ হাজার ৬৬৩ টাকা। (এ টাকার পরিমাণ যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে)

মনে রাখবেন, সকল চার্জ আর ফি এর উপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। তাই আপনাকে ভ্যাটসহ টাকা জমা দিতে হবে। http://www.brta.gov.bd/cal/motorcycle.php এই লিঙ্কের মাধ্যমে আপনার মোটরসাইকেলের উপর প্রযোজ্য ফি আর চার্জসমূহ সহজেই গননা করে নিতে পারেন। তবে এই চার্জসমূহ বিআরটিএ এর কর্মকর্তারাই আপনার এ্যাসেসেমেন্ট স্লিপে লিখে দেবে। সে অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিন।


আবেদনপত্রটি বিআরটিএ তে জমা দিন
ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে জমা রশিদসহ আপনার আবেদনপত্রটি বিআরটিএ তে নিবন্ধন ডেস্কে জমা দিন। আবেদনপত্র জমা দেবার প্রেক্ষিতে একজন ভেহিকল-ইন্সপেক্টর আপনার কাগজসহ আপনার মোটরযান পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শন শেষে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আপনার কাগজ অথরাইজেশন করে নতুন রেজিষ্ট্রেশন নম্বরসহ ছাপানো একনলেজমেন্ট স্লিপ, ফিটনেস আর ট্যাক্স-টোকেন দেবে। এ পর্যায়ে আপনার পরিচিতির সাথে আপনার সক্রিয় মোবাইল নম্বর দিতে ভুল করবেন না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। উল্লেখিত কাগজসমূহ পাবার পর আইনত আপনি রাস্তায় আপনার মোটরসাইকের বের করতে পারবেন তবে আপনাকে ডিজিটাল ব্লু-বুক আর নম্বরপ্লেট পাবার বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই হবে।


ডিজিটাল ব্লু-বুক ও নম্বরপ্লেট সংগ্রহ করুন
একনলেজমেন্ট স্লিপ, ফিটনেস আর ট্যাক্স-টোকেন পাবার পর আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে তার পরপরই বা নির্দেশিত সময়ে বায়োমেট্রিক আইডেনটিটি তথা ছবি, হাতের ছাপ ও স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য বিশেষ মেসেজ আসবে। মেসেজের নির্দেশিত সময়ে বিআরটিএ তে উপস্থিত হয়ে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্যসমূহ প্রদান করুন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া মোটামুটি শেষ। এখন অপেক্ষা করুন। বায়োমেট্রিক আইডেনটিটি দেবার পর অপেক্ষা করতে হবে বিআরটিএ এর পরবর্তী মেসেজের জন্য। আর তাই প্রদানকৃত মোবাইলটি সক্রিয় রাখুন। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সাধারনত মাসখানেকের মধ্যেই দিন-তারিখসহ মেসেজ দেয়া হয়। মেসেজ পাবার পর সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ হতে আপনার ব্লু-বুক আর নম্বরপ্লেট সংগ্রহ করুন।


পুরাতন নিবন্ধনকৃত মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে
সাম্প্রতিক সরকারী ঘোষনা মতে আগামী ১ জানুয়ারী হতে পুরাতন নিবন্ধনকৃত মোটরসাইকেল যাদের আরএফআইডি ডিজিটাল নম্বরপ্লেট নেই তারাও আর পথে নামতে পারবেননা। সুতরাং তাদেরও আরএফআইডি ডিজিটাল নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট-কার্ড নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য নিচের ধাপসমূহ অনুসরন করতে হবে:

বিআরটিএ হতে একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ (মানি ডিপোজিট স্লিপ) সংগ্রহ করুন ও বর্তমান ব্লু-বুক অনুযায়ী মোটরসাইকেলের মালিক ও সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেলের তথ্য দিয়ে সেটা পূরন করুন। এ্যাসেসমেন্ট স্লিপটিতে বিআরটিএ কর্মকর্তার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ফি ও চার্জ সমূহ বসিয়ে নিয়ে তার সিল ও স্বাক্ষর গ্রহন করুন। এরপর নির্দিষ্ট ব্যাংকে এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ সহ টাকা জমা দিন। সেখানে আপনার একটি সক্রিয় মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে। ব্যাংক একটি কম্পিউটারে প্রিন্ট করা মানি রিসিপ্ট দেবে। মানি রিসিপ্ট ও বিআরটিএর পূরনকৃত স্লিপসহ পুরাতন ব্লু-বুকের একটি কপি বিআরটিএ তে জমা দিন। কিছু দিনের মধ্যেই আপনার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে বায়োমেট্রিক আইডেনটিটি তথা ছবি, হাতের ছাপ ও স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য মেসেজ আসবে। মেসেজে নির্দেশিত দিনে বিআরটিএ তে বায়োমেট্রিক তথ্যসমূহ প্রদান করুন। কিছুদিনের মধ্যে আপনার ডিজিটাল নম্বরপ্লেট আর স্মার্ট রেজিষ্ট্রেশন কার্ড প্রস্তুত হলে আবার বিআরটিএ আপনাকে দিন-তারিখসহ তা সংগ্রহের জন্য মেসেজ পাঠাবে। সংশ্লিস্ট অফিসে আপনার মোটরসাইকেল, পুরাতন ব্লু-বুকের কপি আর মানি ডিপোজিট স্লিপসহ উপস্থিত হয়ে আপনার নতুন আরএফআইডি নম্বরপ্লেট ও স্মার্ট নিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করুন। সাধারনত মাসখানেকের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে দেরী হলে ৬৯৬৯ নম্বরে কল করে অথবা NP<space>A<space>Date এই ফরম্যাটে (NP A 00) লিখে 6969 নাম্বারে মেসেজ পাঠিয়ে একটা অ্যাপয়েন্টমেনট চাইতে পারেন। এখানে ০০ হচ্ছে মেসেজের তারিখ। ফিরতি মেসেজে আপনাকে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হবে।

মনে রাখবেন, বিআরটিএ এর বর্তমান স্মার্ট রেজিষ্ট্রেশন কার্ড এর ফি ২,২০০ টাকা ও আরএফআইডি নম্বরপ্লেট এর ফি ৫৪০ টাকা। তবে সব ফি ও চার্জের সাথে ১৫% ভ্যাট মিলিয়ে মোট ২,৮১৫ টাকা জমা দিতে হবে। এছাড়াও ২০১০ সালের পরের সব রেজিষ্ট্রেশনে ১৫% ভ্যাট কার্যকর করায় যাদের সেসময়ে রেজিষ্ট্রেশনে কোন ভ্যাট দিতে হয়নি তাদেরকে সেই ভ্যাট দিতে হবে। এটা এড়ানোর কোন উপায়ই নেই। কেননা বিআরটিএ এর ডাটাবেসে সেই টাকা সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রেশন নম্বরের বিপরীতে বকেয়া উল্লেখ করা থাকে যা পূরন করা ছাড়া নতুন কোন ফি উক্ত সফটওয়ারে জমা নিবে না। তাই সফটওয়ারে উল্লেখিত সবটুকু টাকাই ব্যাংকে জমা দিয়ে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা রশিদ নিতে হবে। মনে রাখাবেন, সময় ও বিআরটিএর জোন ভেদে এই প্রক্রিয়ার কিছুটা হেরফের হতে পারে তবে মূল ব্যাপারটা একই। তো করে ফেলুন আপনার বাইকটির নিবন্ধন আর রাস্তায় চলাচলে থাকুন নিশ্চিন্ত।


সংগ্রহ: ইন্টারনেট।


No comments:

Post a Comment