আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Sunday, July 1, 2018

নামজারী কি? নামজারী করার বিভিন্ন পদ্ধতি


ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হাল নাগাদ রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে মিউটেশন একটি অপরিহার্য নাম। ইংরেজী মিউটেশন (Mutation) শব্দের বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তন। আইনের ভাষায় এই মিউটেশন শব্দটির অর্থই হলো নামজারী। নামজারী বা নাম খারিজ বলতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা বুঝায়। অর্থাত্ পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারী/নাম খারিজ বলে।

ভূমি মালিকানার রেকর্ড বা খতিয়ান বা স্বত্বলিপি হালকরণের জন্য জরিপ কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। যে সময়ের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে, এওয়াজ সূত্রে বিক্রয়, দান, খাস জমি বন্দোবস্ত ইত্যাদি ভূমি মালিকানার পরিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ভূমি মালিকানার রেকর্ড হালকরণের সুবিধার্থে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে (জেলা প্রশাসক) ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা বলে জমা, খারিজ ও নামজারী এবং জমা একত্রিকরণের মাধ্যমে রেকর্ড হাল নাগাদ সংরক্ষণ করা হয়। কমিশনার (ভূমি) ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১ঌঌ০ এর ২০অনুচ্ছেদ বলে নামজারী বা মিউটেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পূর্বে নামজারীর বা মিউটেশনের দায়িত্ব উপজেলা রাজস্ব বা অফিসার বা সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) পালন করতেন।


নামজারীর বিভিন্ন পদ্ধতি:
ভূমির মালিকানা যেমন বিভিন্ন ভাবে অরর্র্জিত হয় তেমনি নামজারীর ধরনও বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমন:
১। হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারী
২। সার্টিফিকেট মূলে নামজারী
৩। এল.এ মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারী
৪। আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারী
৫। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী
৬। আবেদনের ভিত্তিতে নামজারী।


হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারী:
দলিল রেজিস্ট্রির পর হস্তান্তর নোটিস (এল.টি নোটিস) সহকারী ভূমি কমিশনারের অফিসে পাঠাতে হবে। উক্ত নোটিস পাবার পর সহকারী ভূমি কমিশনার তার অফিসে একটি নামজারী কেস নথি খুলে তা তদন্তের জন্য তহসিল অফিসে পাঠাবেন। তহসীলদার সরেজমিনে ও রেকর্ড যাচাই করে বাংলাদেশ ফরম নং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।


সার্টিফিকেট মূলে নামজারী:
সার্টিফিকেট মূলে কোন খবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নামজারীর আবেদন করলে নিলামের বায়না ও দখলনামার ভিত্তিতে নামজারী আবেদন মঞ্জুর করা যাবে। নিলাম ক্রেতা সরকার হলে, রেজিষ্ট্রার (i) I (ii) সংশোধন করতে হবে এবং রেজিষ্ট্রার (Viii) এর খন্ড সংশোধন করতে হবে।


এল. এ মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারী:
কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ভূমি অধিগ্রহণ করে নামজারীর আবেদন না করলে কালেক্টরের এল.এ. শাখা হতে ভূমি অধিগ্রহণের (এল.এ) মোকদ্দমার নম্বর ও তফশিল সংগ্রহ করে ঐ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নামে হোল্ডিং খোলার জন্য নোটিশ আবেদন পাওয়া গেলে পেশকৃত কাগজ পত্র যাচাইক্রমে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে।


আদালতের ডিক্রিমূলে নামজারী:
আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারী খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নামজারী করা যায় এরূপ ডিক্রির (একতরফা/ দোতরফা) এরপর উক্ত জমি পুনরায় রেজিস্ট্রির প্রয়োজন।(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর ৩২১ অনুচ্ছেদ)

তবে এরূপ ডিক্রি মূলে প্রাপ্ত খাস জমির নাম জারীর আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারী মোকদ্দমা চালু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মতামতের জন্য তা কালেক্টরের (ডি.সি) এর নিকট প্রেরণ করতে হবে।


উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী:
কোন হোল্ডিং এর মালিকের মৃত্যুতে (যদি তিনি তার সম্পত্তি নিজ নামে আলাদা হোল্ডিং করে গিয়ে থাকেন) তার উত্তরাধিকারীগণ নিজেদের নাম ঐ হোল্ডিং ভূক্ত করার জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট দরখাস্ত করতে হবে এবং উক্ত দরখাস্তের সাথে সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গণের বরাবরে প্রেরিত ভূমি প্রশাসন বোর্ডের ১৮-৭-১৯৮৪ ইং তারিখের ২০-এ.এস-১৭/৮৪ (১৪০) নং স্মারকের ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দরখাস্তকারীকে ম্যাজিষ্ট্রেট/প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সংসদ সদস্যের মত জন প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত সাকশেসন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।

উত্তরাধিকারী আবেদনকারী সাকশেসন সার্টিফিকেট সহ নামজারীর জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট দরখাস্ত দাখিল করলে ভূমি সহকারী কমিশনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে নামজারীর আদেশ দিবেন। এক্ষেত্রে নতুন কোন হোল্ডিং না খুলে মৃত ব্যক্তির নাম কর্তন করে, ফারায়েজ অনুযায়ী হিস্যা/জমির ভাগ বন্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম পূর্বের হোল্ডিং এর জায়গায় হোল্ডিংভুক্ত করলেই চলবে।


উত্তরাধিকার/ওয়ারিশসূত্রে নামজারী করার জন্য কি করতে হবে?
নিম্নবর্ণিত কাগজপত্রসহ সকল ওয়ারিশকে সংশ্লিষ্ট উপ-পরিচালক (এষ্টেট) বরাবর আবেদন করতে হবে:

১। মৃত্যু সনদপত্র (ঢাকা সিটি করপোরেশন/ রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত)

২। ওয়ারিশান সার্টিফিকেট (ওয়ার্ড কমিশনার/ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত)

। ৩। সাক্সেশন সার্টিফিকেট (উপযুক্ত আদালত কর্তৃক প্রদত্ত)

। ৪। নমুনা মোতাবেক ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে সকল ওয়ারিশের অঙ্গীকারনামা।

৫। (ক) সকল ওয়ারিশের পাসপোর্ট আকারের ছবি ১টি করে (গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত)

। (খ) পূর্ণাঙ্গ আবেদন প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে নামজারী ফিস জমা প্রদানের পত্র দেয়া হবে।

(গ) নির্ধারিত হারে নামজারী ফিস জমাদানের পত্র পাওয়ার পর আবেদনকারী কর্তৃক তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে।

(ঘ) নামজারী ফিস জমা প্রদানের রশিদ পাওয়ার ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে নামজারী আদেশ প্রদান করা হবে।

(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ৩২১ অনুচ্ছেদ)।


সংগ্রহ: ইন্টারনেট।


No comments:

Post a Comment