আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Sunday, July 1, 2018

মুসলিম আইনে বিবাহ, বিবাহের নিয়ম ও শর্তসমূহ


ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎস্ গুলো থেকে শরীয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত বিধায় এই আইনকে মুসলিম আইন বলা হয়। ইসলাম ধর্ম যেহেতু একটি সার্বিক জীবন বিধান, বিবাহের ব্যাপারেও এর কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় না। এখানে বিবাহের আইনগত গুরুত্ব, সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদা বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। একটি ছেলে ও মেয়ের বা পুরুষ ও নারীর সহবাস, জীবন যাপন ও সংসার ধর্ম পালন এর লক্ষে, ধর্মীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতেই বিবাহ প্রথার জন্ম। মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে হলো দেওয়ানী চুক্তি [(Contractual Agreement (of Civil Nature)]।

ইসলাম ধর্মের অন্যকোন উৎস অথবা বাংলাদেশের প্রচলিত অন্য যে কোন আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, মুসলিম পারিবারিক আইন এর অধীনে একটি আইন সম্মত নিকাহ/বিবাহ সম্পাদনের জন্য ৫ (পাঁচ) টি শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে। অর্থাৎ, একটি বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হতে হলে নিম্ন বর্ণিত বিষয় গুলো উপস্থিত থাকতে হবে:

১। পক্ষ গণের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে (ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের ১৮), অর্থাৎ বিয়েটি বাল্য বিবাহ হওয়া যাবে না।;

২। পক্ষ গণের বিয়েতে সম্মতি থাকতে হবে (ইজাব ও কবুল); বিশেষভাবে নারীদের ক্ষেত্রে জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা যাবেনা;

৩। প্রাপ্ত বয়স্ক/বয়স্কা ২ (দুই) জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়েটি সম্পন্ন হতে হবে;

৪। দেনমোহর বা মোহরানা নির্ধারণ;

৫। বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করা।

যদিও বাংলাদেশের পারিবারিক আইনের আওতায় মুসলিমদের বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক বিধান গুলো মুসলিম পারিবারিক আইন, অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (Muslim Family Laws Ordinance, 1961) অনুসারে পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্তু বিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ [Muslim marriages and Divorces (Registration) Act, 1974]–এর বিধান অনুযায়ী হয়ে থাকে।

১। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ এর অধীনে বরের বয়স অবশ্যই ২১ বৎসর এবং কনের বয়স ১৮ বৎসর হতে হবে। সমাজের যে কোন চুক্তি সম্পাদনের জন্য যেমন দুই পক্ষ কে প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী হতে হয়, তেমনি বিয়ের চুক্তির ক্ষেত্রেও পক্ষদ্বয়কে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হয়, অন্যথায় সাধারণ চুক্তির মতো এই চুক্তিও আইন সম্মত হবে না, বাতিল যোগ্য হবে।

২। পক্ষগনের সম্মতির ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, একটি পক্ষ প্রস্তাব করার পর অন্য পক্ষ কর্তৃক উহা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে হবে। এবং বৈধ বিবাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে উহার গুরুত্ব অপরিসীম। কোন সুস্থ মস্তিস্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক সম্পন্ন মুসলমানের বিয়ে যদি তার সম্মতি ব্যতিরেকে সম্পন্ন হয় তাহলে উক্ত বিবাহ চুক্তিটি বৈধ বিবাহ বলে গন্য হবে না। একটি বৈধ বিবাহ সম্পাদনের জন্য বর কনেকে প্রস্তাব দেবে যাকে ইজাব বলা হয়, এবং কনে উক্ত প্রস্তাবটিতে নিজে সম্মতি প্রদান করিয়া কবুল বলিয়া গ্রহণ করিবে।

৩। একটি বৈধ বিবাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সাক্ষিদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। এই সাক্ষী সম্পর্কে হানাফি মত অনুসারে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার কথা বলা হয়েছে – একজন পুরুষকে একজন পূর্ণ সাক্ষ্য এবং সাক্ষি হিসেবে একজন নারীকে একজন পুরুষের অর্ধেক ধরা হয়েছে, অর্থাৎ একজন নারী সাক্ষীর সাক্ষ্য গুণ একজন পুরুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য গুণের অর্ধেক। কিন্তু বাংলাদেশের (সাক্ষ্য আইন) অনুযায়ী নারী ও পুরুষ সমান গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। সুতরাং, বিয়ের সাক্ষি হিসেবে উপস্থিত দুই জনের দুই জন পুরুষ, দুই জন নারী অথবা একজন পুরুষ আর একজন নারী হতে পারে। বিয়ের প্রস্তাবটি সাক্ষীদের সামনে এমন ভাষায় প্রস্তাবিত হতে হবে যাতে করে উপস্থিত সবাই সেটা বুঝতে পারে যে এটা একটা বিবাহ চুক্তি সম্পাদন হইতেছে।


সংগ্রহ: ইন্টারনেট।


No comments:

Post a Comment