আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Wednesday, July 4, 2018

চট্রগ্রাম জেলার ইতিহাস

১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট : বন্দর নগরী চট্টগ্রাম প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে উন্নতি ও
সমৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্টের অধিকার
এ জেলা চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত। আনুষ্ঠানিকভাবে এ জেলার সৃষ্টি হয় ১৬৬৬
সালে ।
২. নামকরণ : বর্তমান চট্টগ্রাম জেলা চাটিগাও বা চাটগাও নামেও পরিচিতি ছিল।
এই নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। মুসলমানগণ গৌঢ় জয় করার
কিছুকাল পরে এদেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে বারজন আউলিয়ার আগমন
ঘটেছিল। তাদের আগমনের কারণে চট্টগ্রামকে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি বলা
হয়। তারা এ অঞ্চলে জ্বীন বা পরী তাড়াবার জন্য একটি বড় বাতি (চেরাগ)
জেলে উচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। কথিত আছে, এই বাতি যতদূর ছড়িয়ে
পড়েছিল ততদূর থেকে জ্বীন-পরীরা পালিয়ে গিয়েছিল এবং সর্ব প্রথম মানুষের
বসবাস উপযোগী হয়ে উঠে । চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় 'চাটি' অর্থ 'বাতি' বা
চেরাগ আর গাও অর্থ গ্রাম। সুতরাং এ থেকে এই অঞ্চলের নাম হয় চাটিগাঁও ।
আবার বৌদ্ধদের ধারণাচট্টগ্রাম নামটা চৈত কেয়াং' বা চৈতগ্ৰাম' শব্দের।
অপভ্রংশ। চৈতগ্ৰাম' অর্থ বৌদ্ধ কীৰ্তিস্তম্ভের আবাসস্থল। এশিয়াটিক সোসাইটির
প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোনস বলেছেন এই অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর স্দে
পাটি চটগ' থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। কারো কারো মতে, ৯৫৩ সালে।
আরাকানের বৌদ্ধ রাজা বাংলাদেশ আক্রমণ করে বর্তমান চট্টগ্রামে একটি বিজয়
স্তত্ব স্থাপন করেন। এই বিজয় স্তম্বে লেখা ছিল- ‘চিৎ-তে-গেীং- যার অর্থ যুদ্ধ
করা অন্যায়। এই শব্দ হতেই চিটাগাং বা চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে
ধারণা করা হয় ।
৩. আয়তন : (প্রায়)৫,২৮৩ বৰ্গ কি: মি:।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ৭৬,১৬৩৫২ জন। পুরুষ-৩৮,৩৮,৮৫৪ ও মহিলা
৩৭,৭৭,৪৯৮। বৃদ্ধির হার : ১.৪০% ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) : ১৪৪২ জন।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ১৪টি। আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী,
চন্দনাইশ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, লোহাগড়ামীরসরাই, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ,
রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া ও পটিয়া, ।
৬. থানার সংখ্যা ও নাম : ২০টি। কোতোয়ালি, চাঁদগাও, বন্দর, ডবল মুরিং,
ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মীরসরাই, পাহাড়তলীপাঁচলাইশ, রাঙ্গুনিয়ারাউজান,
সন্দীপ, সীতাকুন্ড, আনোয়ারাবাশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, লোহাগড়া
পটিয়া ও সাতকানিয়া । মেট্রোপলিটন থানা- ১২টি।
৭. সংসদীয় আসন : ১৫টি। (১) মীরসরাই উপজেলা। (২) ফটিকছড়ি উপজেলা।
(৩) সীতাকুন্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-০৯ ও
১০। (৪) গড়দুয়ারা ইউনিয়ন ব্যতীত হাটহাজারী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি
কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-০১ ও ০২। (৫) রাউজান উপজেলা এবং হাটহাজারী
উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়ন। (৬) রাংগুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালী।
উপজেলার শ্রীপুরখরনদ্বীপ ইউনিয়ন। (৭) শ্রীপুর-খরনদ্বীপ ইউনিয়ন ব্যতীত
বোয়ালখালী উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-০৩০৪, ০৫,
০৬ ও ০৭। (৮) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-১৫, ১৬১৭, ১৮,
১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ । (৯) চট্টগ্রাম সিটি
কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-০৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬। (১০)
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নং-২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯,
৪০ ও ৪১। (১১) নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ ব্যতীত পটিয়া উপজেলা : চর
পাথরঘাটা, চরলক্ষ্যা, জুলধাবড়উঠান ও শিকলবাহা। (১২) আনোয়ারা।
উপজেলা ও পটিয়া উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : চর পাথরঘাটা,
চরলক্ষ্যাজুলধা, বড়উঠান ও শিকলবাহা। (১৩) চন্দনাইশ উপজেলা ও
সাতকানিয়া উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমুহ কেওচিয়া, কালিয়াইশ,
বাজালিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড়, ছদাহা ও খাগরিয়া। (১৪) লোহাগড়া উপজেলা ও
নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমুহ ব্যতীত সাতকানিয়া উপজেলা : কেওচিয়া, কালিয়াইশ,
বাজালিয়াধর্মপুর, পুরানগড়, ছদাহা ও খাগরিয়া। (১৫) বাঁশখালী উপজেলা।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তি : বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস,
মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বিনোদ বিহারী চৌধুরী,
জহুর আহমদ চৌধুরীএম এ আজিজ, এম এ হান্নান, মনিরুজ্জামান,
ইসলামবাদী সিপাহী সুবেদার রজব আলীকাজেম আলী মাস্টার, শরৎ দাশ,
মহিমচন্দ্র দাস, কমরেড মোজাফফর আহমদ, মীর হামজামীর ইয়াহিয়াএবাদ
উল্লা পন্ডিত, বঞ্চিম চন্দ্র সেন, ড. অন্নদা, চরছ খাস্তগীর, ড. চন্দ্ৰকান্ত খাস্তগীর,
কবি শাহ মোহাম্মদ ছগির, কবি মুজামিল, কবি আফজাল আলীসাংবাদিক
মইনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, শ্ৰীকর নন্দি, দৌলত উজির বাহরাম খান,
হাজী মোহাম্মদ, মুহাম্মদ কবির, জ্যোতির্ময়ী চৌধুরী, কবিয়াল রমেশ শীল, শিল্পী।
নাসির উদ্দিন, গৌরাঙ্গ রুদ্র, আশুতোষ চৌধুরী, সত্য সাহা, তেজেন সেন প্রমূখ।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-২৬৪ কি. মি. ও রেলপথে-৩৪৬ কি. মি.।

১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : ঢাকা-সায়েদাবাদ-চট্টগ্রাম বাস স্টেশন, বহদ্দার হাট
বাস টার্মিনাল, দামপাড়া বাস টার্মিনাল, কদমতলী বাস টার্মিনাল। রেল
পাহাড়তলী রেলওয়ে জংশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইত্যাদি। এনডব্লিউডি
কোড নম্বর : ০৩১ ও পোষ্ট কোড- জিপিও-৪০০০ এবং হেড অফিস-৪১০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক আজাদী, পূর্বকোণ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ,
আজকের চট্টগ্রাম, নয়াবাংলা, সাপ্তাহিক দ্বীপের কণ্ঠ ও সাহসিকা ।
১২. সিটি কর্পোরেশন-০১টি, পৌরসভা১০টি ও ইউনিয়ন-১৯৫টি।
১৩উপজেলা ভূমি অফিস১৬টি। শিক্ষার হার-৫৮.৯%।
১৪. মৌজার সংখ্যা-৮৯০ টি ও গ্রামের সংখ্যা-১২৬৭টি।
১৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-২,৫৯৭টি, কিন্ডার গার্টেন-৩৩৭টি,
কমিউনিটি প্রা. বিদ্যালয়-২২৬টি, কমিউনিটি স্কুল-২০২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়
৬২৩টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৪৫টি; কলেজ-১২৫টি, বিশ্ববিদ্যালয়-০৬টি,
ক্যাডেট কলেজ-০১টি, বিশ্ববিদ্যালয়-৯টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা-২৪২টি ও
মাদ্রাসা-২৯৪টি।
১৬. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ৫,৯৫০টি, মন্দির-৭৫০ টি ও গীর্জা-৪৪টি।
১৭. চিকিৎসা কেন্দ্র : হাসপাতাল-১৫টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১৪টি, ক্লিনিক
২২টি ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র-২৩টি।
১৮. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, তামাক, ফলমুল ও শাক সবজি।
১৯. নদনদীর নাম : কর্ণফুলীসাজু, হালদা, ফেনী নদী ইত্যাদি।
২০. দর্শনীয় স্থান ফয়েস লেক, চিড়িয়াখানা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, জিয়া স্মৃতি
যাদুঘর, হযরত শাহ আমানত (র:) ও হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (র:)-এর
মাজার, জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর, কালুরঘাট ব্ৰীজ, ওয়ার সিমেট্রি, বাটালী হিল,
চন্দ্রনাথ পাহাড় (সীতাকুন্ড), বাঁশখালী ইকোপার্ক, পরকি সী বীচ (আনোয়ারা),
ঐতিহাসিক কোর্ট বিল্ডিং, শেখ ফরিদের কারখানা।
২১. জেলার ঐতিহ্য : সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে মিলে মিশে।
আছে চট্টগ্রাম জেলার ঐতিহ্য। কাউয়ালীসহ ইসলামী গান, লোকসংগীত,
বলিখেলামেজবান, অতিথি আপ্যায়ন, বন্দর নগরীবর্ণাট্য বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো
সারা বিশ্ববাসীর কাছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের পরিচয় করিয়ে দেয় ।

No comments:

Post a Comment