আপনাদের আন্তরিক অভিন্দন ও শুভেচ্ছা

Wednesday, July 4, 2018

নরসিংদী জেলার ইতিহাস

১. সৃষ্টির প্রেক্ষাপট । কথিত আছে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি নরসিংহ নামক
রাজার শাসনাধীন ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা
নরসিংহ প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট
নগর স্থাপন করেছিলেন। তারই নাম অনুসারে নরসিংদী নামটি আবির্ভূত
হয়। কালের বিবর্তনে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে অসংখ্য বসতি গড়ে উঠে।
বর্তমানে সেটি নগর নরসিংহপুর মৌজা ও নরসিংহ গ্রাম নামে পরিচিত ।
নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’ যুক্ত হয়ে নরসিংদী হয়েছে। নরসিংদী শব্দের
পরিবর্তীরূপ-নরসিংদী। পরবর্তীতে নরসিংদী জেলার এ অঞ্চলটি মহেশ্বরদী
পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ পরগনার জমিদার ছিলেন দেওয়ান শরীফ খাঁ ও
আয়শা আক্তার খাতুন। জমিদার প্রথা বিলোপের পর একসময় নরসিংদী ছিল
প্রশাসনিকভাবে ঢাকা জেলাধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা।
পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ঢাকা জেলার একটি মহকুমায় উন্নীত করা হয়।
১৯৮৪ সালে নরসিংদী সদরপলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব এবং
রায়পুরা-এ ০৬টি উপজেলা এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদী জেলা
ঘোষণা করা হয় এবং শুরু হয় জেলার যাত্রা ।
২. নামকরণ : নরসিংদী নামকরণ নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক অনেক অভিমত
ব্যক্ত করেছেন। তবে নরসিংদীর নামের ইতিহাস একটি বইয়ে পাওয়া যায় ।
সোনারগা ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ধনপদসিংহ
নামক জনৈক হিন্দু জমিদারী প্রতিষ্ঠা করে রাজা খেতাব লাভ করেন। রাজা
ধনপদসিংহের একমাত্র পুত্র নরসিংহ শীতলক্ষ্যা নদীর তিন মাইল পূর্বে,
প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে মহেশ্বরদী পরগনায় নগর নরসিংহপুর নামে
একটি ছোট শহর প্রতিষ্ঠা করে বসবাস করতে থাকেন। উক্ত রাজা
নরসিংহের নাম থেকে নরসিংদী নামকরণ করা হয়েছে।
৩. আয়তন : (প্রায়) ৩,৩৬০.৫৯ বর্গ কি. মি.।
৪. লোকসংখ্যা : মোট-(প্রায়) ২২,২৪,৯৪৪ জন। পুরুষ-১১,০২,৯৪৩ ও
মহিলা-১১,২২০০১। বৃদ্ধির হার : ১.৫৯% জন ও ঘনত্ব (বৰ্গ কি. মি.) :
১৯৩৪ জন ।
৫. উপজেলার সংখ্যা ও নাম : ৬টি। নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুরবেলাবো,
মনোহরদী ও রায়পুরা ।
৬. থানার সংখা ও নাম : ৬টি। নরসিংদী, পলাশ, শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী
ও রায়পুর ।
৭. সংসদীয় আসন : ০৫টি। (১) নিম্নবর্ণিত ইউনিয়ন ব্যতীত নরসিংদী সদর।
উপজেলা : আমদিয়াপাচদোনা, মেহেরপাড়া ও শিলমান্দি। (২) পলাশ
উপজেলা ও নরসিংদী সদর উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : আমদিয়া,
পাচদোনা, মেহেরপাড়া ও শিলমান্দি। (৩) শিবপুর উপজেলা ও রায়পুরা
উপজেলার নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ : ডৌকারচর, মরজাল ও উ: বাখরনগর।
(৪) মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা। (৫) নিম্নবর্ণিত ইউনিয়নসমূহ ব্যতীত
রায়পুরা উপজেলা : ডৌকারচর, মরজাল ও উ. বাখরনগর।
৮. বিশিষ্ট ব্যক্তি : বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, খান মল্লিক, আলহাজ্ব মৌলভী
তোফাজ্জল হোসেন, আন্দুল আলিম মিয়া, কবি শামসুর রাহমান, ড.
আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, সাবেক
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল। নূরুদ্দিন খান, ভিসি প্রফেসর আন্দুল মান্নান,
ভিসি জসিম উদ্দিন আহমেদ, বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান, শহীদ আসাদ,
বেনজীর আহমদ, আপেল মাহমুদ, রতন সিদ্দিকী প্রমুখ ।
৯. ঢাকা থেকে দূরত্ব : সড়ক পথে-৫২ কি. মি. ও রেলপথে-৫৯ কি. মি.।
১০ . যোগাযোগ ব্যবস্থা : বাস : নরসিংদী কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন, ভেলানগর বাস।
স্টেশন, ঢাকা-নরসিংদী বিআরটিসি বাস স্টেশন গুলিস্তান, ইটাখোলা বাস।
ষ্টেশন। রেল : নরসিংদী রেল স্টেশন, ঘোড়াশাল ক্লাগ স্টেশন, ঘোড়াশাল।
আমিরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন। লঞ্চ : নরসিংদী লঞ্চ টার্মিনাল-কাউরিয়াপাড়া,
ঘোড়াশাল লঞ্জ টার্মিনাল ইত্যাদি। এনডব্লিউডি কোড নম্বর : ০৬২১ ও
পোষ্ট কোড-১৬০০।
১১. পত্রপত্রিকা : দৈনিক উত্তাপ, নরসিংদীর বাণীগ্রামীণ দর্পণ, সাপ্তাহিক
খোরাক, নরসিংদী সংবাদ, নরসিংদীর খবর, নরসিংদীর কথানরসিংদীর
কাগজ, চেতনা, অতিক্রম, সাত দিনের কণ্ঠ, নরসিংদীর বার্তা, চোখের আলো
ও খোজখবর।
১২. পৌরসভা-৬টি ও ইউনিয়ন-৭০টি।
ও "
১৩. উপজেলা ভূমি অফিস-০৬টি ও ইউনিয়র ভূমি অফিস-৭১টি।
১৪. মৌজার সংখ্যা-৬২৪টি ও গ্রামের সংখ্যা-১,০৯৫টি।
১৫. মোট ভূমির পরিমাণ-২,৭৫,৩৩৩ একর।
১৬. শিক্ষার হার-৪৫%।
১৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : প্রাথমিক বিদ্যালয়-৭৪৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১৩৬টি,
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়-৩৯টি, কলেজ-৩৩টি, কারিগরী বিদ্যালয়-০৯টি ও
মাদ্রাসা-৯৩টি ।
১৮. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান : মসজিদ-২,০৯৪টি ও মন্দির৪৯টি।
১৯. চিকিৎসা কেন্দ্র ৷ হাসপাতাল-০১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-০৫টি,
ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র-১৪টি ও ক্লিনিক-০৮টি।
২০. উল্লেখযোগ্য ফসল : ধান, পাট, কলা ও বিভিন্ন সবজি।
২১. নদনদীর নাম : মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা ।
২২. দর্শনীয় স্থান । ওয়ারী বটেশ্বর, বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান স্মৃতি যাদুঘর,
সোনাইমুড়ি টেক, আশ্রাবপুর মসজিদ, বেলাবো বাজার জামে মসজিদ, শাহ
ইরানী মাজার, দেওয়ান শরীফ মসজিদ, গিরিশ চন্দ্র সেনের বাস্তভিটা, ড্রীম
হলিডে পার্ক ইত্যাদি।
২৩. জেলার ঐতিহ্য ; দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল মেঘনা বিধৌত ভূমি, পশ্চিমাঞ্চল উচ্চ
সমতল ভূমি উত্তরাঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড়, টিলাটেক নয়নাভিরাম অরণ্য
আবরণে আবৃত। এ জেলার উত্তরাঞ্চলে পাহাড়ি ভূমি বাংলাদেশের আদি
ভূমির অন্তর্গত। এ জেলার আদি ভূমিতে অবস্থিত বেলাব উপজেলার ‘ওয়ারি
বটেশ্বর গ্রামে পরিত্যক্ত ভিটা ও অসমরাজার গড় আবিস্কৃত হয়েছে, যা নব্য
প্রস্তর যুগীয় সভ্যতার নিদর্শন ও পাইকারী কাপড়ের বাজার হিসেবে বাবুর
হাটের নাম বিখ্যাত ।

No comments:

Post a Comment